চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাকে পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত সবুজ নগরী হিসেবে গড়তে চান হাসান শাহরিয়ার খাঁ

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
আসন্ন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে নির্ধারিত হবে কে হচ্ছেন পৌরসভার নতুন নগর পিতা। তফসিল ঘোষনার পর বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমানসহ অনেকেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান, আ’লীগ দলীয় গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী এনাম পাটোয়ারী এবং পৌর বিএনপি’র আহবায়ক তাহের পলাশীসহ হেভিওয়েট অনেক প্রার্থী।

মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত জিএম মীর হোসেন মীরু নৌকা প্রতীক নিয়ে, বিএনপি কর্তৃক মনোনীত হারুনুর রশিদ ধানের শীষ, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা হাাসান শাহরিয়ার খাঁ মোবাইল ফোন নিয়ে এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বেলাল আহমেদ মিয়াজী প্রতিদ্বন্ধিতায় টিকে রয়েছেন। অধিকাংশ মেয়র পদে প্রার্থীই প্রভাবশালী হওয়ায় একটি সুন্দর এবং প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচনের আশা করছেন পৌরবাসী।

৩০ শে জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত সবুজ নগরীগড়ার প্রত্যয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল ফোন নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন পৌরসভার ঐহিত্যবাহী শ্রীপুর গ্রামের খাঁ পরিবারের সন্তান উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি হাসান শাহরিয়ার খাঁ। তফসিল ঘোষনার পর থেকেই নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণয়নকৃত সকল নিয়ম-কানুন মেনে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য প্রার্থীতের মতো শব্দের অপব্যবহার না করে, জনজীবন বিঘ্নিত না করে উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, মহিলা সমাবেশের মাধ্যমে মোবাইল ফোন প্রতীকে ভোট চেয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারের কারণে অনেক ভোটারদের মনোযোগও আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

হাসান শাহরিয়ার খাঁ চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামে ঐহিত্যবাহী খাঁ পরিবারে ১৯৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সমগ্র চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রেখেছেন খাঁ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। চৌদ্দগ্রাম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মরহুম ডা. আশ্রাফ উদ্দিন খাঁ এবং মাতা মরহুমা আমেনা খাতুনের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র হাসান শাহরিয়ার খাঁ। চার ভাই নয় বোনের মধ্যে অধিকাংশই আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া এবং দেশে শিক্ষকতায়, ব্যবসায়, চাকুরীতে প্রতিষ্ঠিত।

হাসান শাহরিয়ার খাঁ নিজেও অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৯৫ সালে চৌদ্দগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রী শেষ করে শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন তিনি। কর্মজীবনে ব্র্যাক ব্যাংকের অফিসার, পরবর্তীতে একাধারে কুমিল্লা ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের প্রভাষক এবং চৌদ্দগ্রাম সরকারী কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ০৬ মাস দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৫ সালে হাসান শাহরিয়ার খাঁ শাহিনা আক্তার মজু: (তন্বী) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের সংসারে ১টি কন্যা সন্তান রয়েছে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি ও সামাজিকতায় নিজেকে জড়িত রেখেছেন তিনি। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই রাজনীতি বিমুখ হলেও হাসান শাহরিয়ার খাঁ স্কুল জীবনেই ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৪ সালে চৌদ্দগ্রাম এইচ জে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে একাধারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সাহিত্য ও বিতর্ক সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এবং সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে ছাত্ররাজনীতি শেষ করেন।

পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং মেধার মূল্যায়ন করে উপজেলা বিএনপি তাকে প্রথমেই আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপি’র ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করেন। বর্তমানে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততার স্বীকৃতি স্বরূপ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার এবং বিতর্ক পরিষদের আজীবন সদস্য হিসেবে মনোনীত হন হাসান শাহরিয়ার খাঁ।

স্বল্প বয়সে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ মেধাবী এ রাজনীতিবীদ এক সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষাৎকার প্রদান করেন। নিচে কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
প্রশ্নঃ মাত্র ৪০ বছরেই ছাত্রদল, কৃষকদল, মূলদল। সময়েই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আপনার। গতবারও পৌরসভা নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থীতা চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। এবারো দলীয় প্রতীক না পেয়েও নির্বাচন করছেন কেন?

★হাসান শাহরিয়ার খাঁঃ ছাত্ররাজনীতি অবস্থায় কারাবরণসহ এ পর্যন্ত সর্বমোট ৫ বার কারাবরণ করেছি। গাড়ি পোড়ানোর মামলা, বেগম জিয়ার গ্রেফতার পরবর্তী মামলা, ২০০১ সালে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের মামলাসহ বহু মামলার আসামী হয়েছি। ২০১৫ সালে মিয়াবাজারের এইট মার্ডারের ঘটনা পরবর্তী যৌথবাহিনী আমার বাড়িতে ভাংচুর ও হামলা চালায়। ছাত্রলীগের হাতে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো রাজনীতির জন্য নিজের উজ্জল ভবিষ্যতকে বিষর্জন দিয়েছি। বারবার চাকুরী ছাড়তে হয়েছে মামলা, জেল এবং রাজনীতি প্রীতির কারণে। পকেটের টাকা শেষ করে পারিবারিক সম্পদ, জমানো সঞ্চয়ের টাকা শেষ করেছি রাজনীতির জন্য কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পাইনি। বিগত পৌরসভা নির্বাচনেও আমি শক্ত প্রার্থী ছিলাম। দলের নির্দেশনা মেনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করি। এবার চলমান পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পূর্ব থেকেই নির্বাচনের মাঠে নামি। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ নেতাকর্মী আমার সমর্থনে শুরু থেকেই কাজ করে, এর ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে জেলায় অবস্থান এবং কেন্দ্রের সমর্থন পাই। কিন্তু ১দিনের ব্যবধানে শক্ত একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমার দলীয় মনোনয়নকে আবারো বাঁধাগ্রস্থ করা হয়। যেহেতু মনেপ্রাণে জনগণের সেবা করার ইচ্ছা তাই দলীয় সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।

প্রশ্নঃ আপনার পৌরসভার কোন কোন ক্ষেত্র উন্নয়ন বঞ্চিত বলে আপনি মনে করেন?
★হাসান শাহরিয়ার খাঁঃ বিগত ২০০৪ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিবর্গ পৌরসভার টেকসই উন্নয়ন করেনি টেক্স, কর বৃদ্ধির প্রভাবে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ‘গ’ শ্রেণী থেকে বর্তমানে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার নাগরিকদের জীবনযাত্রার, বিনোদনের, কর্মসংস্থানের দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় পৌরসভায় বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদক, চোরাচালানের রুট বন্ধ করতে পারেনি। গড়ে উঠেনি আধুনিক কোন বিনোদন কেন্দ্র, পাঠাগার, খেলার মাঠ কিংবা উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্নঃ দলীয় সমর্থন ব্যতিত জনগণ আপনাকে কেন নির্বাচিত করবে?
★ হাসান শাহরিয়ার খাঁ: নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সকল প্রার্থীদের তুলনায় পড়ালেখায়, যোগ্যতায়, পারিবারিক অবস্থান আশা করি ভোটাররা আমার বিষয়ে বিবেচনা করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

প্রশ্নঃ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
★হাসান শাহরিয়ার খাঁ: বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়ে সকল নির্বাচনই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। আমি স্বপ্ন দেখি এবং বিশ্বাস করি হয়তো এবার এর ব্যতিক্রম হবে। সরকার জনগণকে নিরাপদে দিনের বেলায় ভোট দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রশ্নঃ আপনি নির্বাচিত হলে সামগ্রিক কোন কোন বিষয়ে এবং উন্নয়নে গুরুত্ব দিবেন?
★হাসান শাহরিয়ার খাঁ: মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে অবস্থানই হবে আমার প্রথম পদক্ষেপ। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধ, সামাজিক অবক্ষয় রোধ, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখামুখী করতে চাই।

প্রশ্ন: অতীতের উন্নয়নে দেখা গেছে আঞ্চলিক টানের প্রভাব। আপনি নির্বাচিত হলে কি শুধু আপনার ওয়ার্ডেই উন্নয়ন করবেন?
★হাসান শাহরিয়ার খাঁ: পৌরসভার প্রত্যেকটি ওয়ার্ড যাতে সুষম বন্টনের মাধ্যমে উন্নয়নের ভাগিদার হতে পারে সেজন্য আমি ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। নির্বাচিত হলে আমি শুরুতেই প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে উন্নয়ন কমিটি গঠন করবো। এসব উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পকারখানা স্থাপন, বিসিক শিল্পনগরীর আধুনিকায়ন, নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্ভুদ্ধকরণ, বে-সরকারী মেডিকেল কলেজ স্থাপন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও শিশু বিনোদন পার্ক স্থাপন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপন, বয়স্কদের জন্য পাঠাগার স্থাপন, চৌদ্দগ্রাম সরকারী কলেজ ও সরকারী মডেল হাইস্কুলের পড়ালেখার মানোন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং এগ্রোভিত্তিক খামার তৈরি, কাঁচবালি থেকে শিল্প কারখানা স্থাপন, মাদক নিরাময় ও পূণর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, পার্ক স্থাপন এবং বালিকা বিদ্যালয়কে সরকারী করণে ও শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতীয় মান নিশ্চিত করা, বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ড উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে চৌদ্দগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত সবুজ নগরী হিসেবে গড়বো ইনশাআল্লাহ।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page